লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম – হিন্দু সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে বাবা লোকনাথ অধিক পরিচিত। তবে তার সম্পূর্ণ নাম হল লোকনাথ ঘোষাল। হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে লোকনাথ ব্রহ্মচারী খুবই জনপ্রিয় এবং পূজনীয় ব্যক্তি ছিলেন। বাবা লোকনাথ ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে লোকনাথ বাবার জন্মস্থান নিয়ে তার শীর্ষদের মধ্যে মতবিভেদ রয়েছে। অনেকের মতেই তার জন্মস্থান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চৌরাশি চাকলা গ্রামে এবং অনেকের মতেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কচুয়াতে তার জন্ম।
তবে শেষ পর্যন্ত বাবা লোকনাথের সঠিক জন্মস্থান প্রকাশ্যে আনতে হাইকোর্টে মামলা করেন তার এক শিশ্য। ওই মামলায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কচুয়া গ্রামে বাবা লোকনাথের সঠিক জন্মস্থান বলে চিহ্নিত হয়। বাবা লোকনাথের পিতার নাম রামনারায়ণ ঘোষাল এবং মাতা শ্রীমতি কমলা দেবী। পিতা নারায়ণ ঘোষাল ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি এবং গুপ্ত সাধক। তিনি তার সন্তনদের মধ্যে যেকোনো একটি সন্তানকে ব্রহ্মচারী করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু স্ত্রী কমলা দেবী কিছুতেই সম্মতি দেননি। পরবর্তীতে চতুর্থ সন্তান হিসেবে লোকনাথ জন্মগ্রহণের পর কমলাদেবী নিজে হাতেই তাকে ব্রহ্মচারী হওয়ার সম্মতি দেন।
চতুর্থ সন্তানকে ব্রহ্মচারী করার জন্য পিতা রাম নারায়ণ বাবু পরম নিষ্ঠাবান এবং সর্বশাস্ত্রের সুপণ্ডিত গৃহ সন্ন্যাসী আশ্চর্য গাঙ্গুলীকে লোকনাথের আচার্য রূপে আমন্ত্রণ জানান। তারপর লোকনাথ আশ্চর্য গাঙ্গুলির সহিত গৃহত্যাগ করে সিদ্ধি লাভের জন্য ১১৪৮ সনে কালীঘাটের শক্তি পিঠে আসেন। তবে বাবা লোকনাথ মৃত্যুর পূর্বে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বারদী আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ১৬০ বছর। বাবা লোকনাথ ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১ লা জুন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী গ্রামে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাবা লোকনাথের ভক্তগণেরা বিভিন্ন স্থানে তার অষ্টোত্তরের শতনাম খুঁজে থাকেন। তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম ও লোকনাথ বাবার ১০৮ নাম তুলে ধরেছি। আসুন এক নজরে দেখে নিন বাবা লোকনাথের অষ্টোত্তর শতনাম ও বাবা লোকনাথের ১০৮ নাম –
লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম
প্রেমবতার(তুমি) ঠাকুর(তুমি) নারায়ণ। ১
অগতির গতি (তুমি)তুমি লোকনাথ।। ২
সুরলোকে ছিলে তুমি হয়ে বিশ্বনাথ। ৩
নাম দিল মা কমলা আমারযাদুমণ।। ৪
ভক্তবাঞ্ছা নাম দিল যতেক্জ্ঞানী গুণী। ৫
শ্রীগোপাল নাম দিল যতেক্প্রতিবাসী।। ৬
মহাযোগী তুমি যে গো জানে ভারতবাসী। ৭
দেবপ্রসাদ নাম রাখিল যতভক্তগণে।। ৮
ব্রহ্মচারী রূপ দিল গুরুভগবানে। ৯
একাদশে নাম পেলে বালকসন্ন্যাসী।। ১০
ভ্রাতাগণ নাম দিলতুমি গৌরশশী। ১১
বিপদবারণ হরি দিল ডেঙ্গুকর্মকারে।। ১২
বিশ্বগুরু হয়ে থাকবিশ্বচরাচরে। ১৩
গোয়ালিনী মা দিল নামভক্তি-মুক্তিদাতা।। ১৪
জীবরূপী শিব তুমি গুরুতুমি জগৎত্রাতা। ১৫
পাপী তাপী নাম দিলতুমি ক্ষমাসার।। ১৬
দয়াময় নামে ফের এ বিশ্বমাঝার। ১৭
বাৎসল্য পারাপার নাম দিলসাধক বেণী।। ১৮
ভবরোগের বৈদ্য তুমি,তোমারে প্রণমি। ১৯
ত্রিকালদর্শী নাম রাখিলবিজয় গোস্বামী।। ২০
সিদ্ধযোগী নাম দিলত্রৈলঙ্গস্বামী। ২১
গুরু গোঁসাই নাম দিল ভক্তভজলে রাম।। ২২
মঙ্গলকারী বাবা তুমি বারদী তীর্থধাম। ২৩
অনাথ শরণ নামপেলে অনাথের কাছে।। ২৪
গীতার ভগবান তুমি ভক্তবৃন্দনাচে। ২৫
ভবের কান্ডারী তুমি ভবপারাপার।। ২৬
সিদ্ধিদাতা গণেশতুমি করুণা অপার। ২৭
নিত্যসিদ্ধ পুরুষ নামরামকৃষ্ণ দিল।। ২৮
কলির কলুষহারী নামযে রহিল। ২৯
ভুবন মঙ্গল নামে রও এইভুবনের মাঝে।। ৩০
সচ্চিদানন্দবাবা তুমি ভক্তহৃদে বাজে। ৩১
স্বজন পালক নাম তোমারগো ব্রহ্মচারী।। ৩২
দুর্জনেরকাছে তুমি চক্রধারী। ৩৩
ব্যথাহারী ডাকে তোমায় যতব্যথিত জনে।। ৩৪
অভয়দাতা নাম দিল যতঅভাজনে। ৩৫
চিরসুন্দর তুমি প্রভু বিশ্বচরাচরে।। ৩৬
জ্ঞানমূর্তি বাবা লোকনাথযে তোমা স্মরে। ৩৭
সর্বহারারকাছে তুমি নির্ধনের ধন।। ৩৮
সর্ব ঘটের ঘটি তুমি থাকসর্বক্ষণ। ৩৯
বেদের বর্ণিতশব্দে তুমি সেই কবি।। ৪০
আলোকজ্যোতি রূপে সদা উদ্ভাসিতরবি। ৪১
অচিন্তের চিন্তা তুমি জগতচিন্তাময়ী।। ৪২
প্রাণীর প্রাণ তুমি ভূলোকস্বামী। ৪৩
ব্রহ্মের সন্তানমোরা তুমি ব্রহ্মময়।। ৪৪
অধম তারণ আর এক নাম প্রভুতোমার হয়। ৪৫
ভীতজনে ডাকে তোমারবরাভয় নামে।। ৪৬
বিশ্বরূপে বিরাজ প্রভু এধরা ধামে। ৪৭
শান্তিদাতা নাম দিলরোগি শোকিগণ।। ৪৮
বিপত্তারণনামে ডাকে তোমা সর্বজন। ৪৯
অনঙ্গ চৈতন্য নাম তোমারযে প্রভু।। ৫০
নিত্য নিরঞ্জন নাম ভুলিবনা কভু। ৫১
জীবের প্রভু তুমি জীবেরজীবন।। ৫২
দ্রষ্টা তুমি দৃশ্যতুমি হেরি সর্বক্ষণ। ৫৩
জগন্নাথ আর এক নামজানে ধরাবাসী।। ৫৪
মহাদেব হয়ে থাক তীর্থবারাণসী। ৫৫
জয় জয় গুরু তোমা ত্রিতাপহারী।। ৫৬
বিরাজি সবা প্রভু গোলকবিহারী। ৫৭
কেউবা তোমার নাম রাখিলবাবা তারকনাথ।। ৫৮
শক্তিধর আরেক নাম তোমারলোকনাথ। ৫৯
ঋষি শ্রেষ্ঠ গুরু তোমার হলযে নাম।। ৬০
বিশ্ব মানব তরে এলে মানবপরাণ। ৬১
পরব্রহ্ম তুমি প্রভুকরুণা নিদান।। ৬২
সপ্ত ঋষিরঋষি তুমি করুণা মহান। ৬৩
সর্ব দিকে আছ তুমি নামদিগম্বর।। ৬৪
পাতঞ্জলেরকাছে তুমি হইলে ঈশ্বর। ৬৫
কুল নারীরকাছে তুমি জাতি কুল মান।। ৬৬
জ্ঞানী জীবেরকাছে হইলে তুমি যে মহান। ৬৭
বিষ্ণুরূপে হেরে তোমায় যতবৈষ্ণবগণ।। ৬৮
শান্তগণে শক্তিরূপে পূজে সর্বক্ষণ। ৬৯
হইল আর এক নাম গৌরাঙ্গসুন্দর।। ৭০
বাসুদেব নামে ব্যক্ত বিশ্বচরাচর। ৭১
আদি দেব তুমি প্রভু পুরুষপরাৎপরে।। ৭২
অচিন্তেরচিন্তামণি যিনি চিন্তা করে। ৭৩
কেহ তোমার নাম দিলঅন্নদাতা প্রভু।। ৭৪
শান্তিসাগর আর এক নামভুলিব না কভু। ৭৫
চিরকাল আছ অলক বিহারী।। ৭৬
চিরকাল রবে নামবাবা ব্রহ্মচারী। ৭৭
মৃত্যুঞ্জয়নামে তুমি রহিবে ধরাতে।। ৭৮
লুপ্ত আযের আচার ধর্মসবারে শিখাতে। ৭৯
গুরুর গুরু নামরাখে স্বামী শিবানন্দ।। ৮০
মোহ তিমিরহর নাম দিলশ্রীমৎ ব্রহ্মানন্দ। ৮১
রজনীকান্ত নাম দিলসাক্ষী দিবাকর।। ৮২
অভয়াচরণ দিল নামতুমি বিঘ্নহর। ৮৩
মনোহর রূপ তোমার মনোহরণনাম।। ৮৪
দয়ারাম প্রভুরূপে বহালে যে বান। ৮৫
সুরথ নাথ নাম দিলতুমি স্পর্শমণি।। ৮৬
মূর্তিমান গীতা নাম দিলযামিনী। ৮৭
ব্যথিতেরব্যাথাহারী তুমি লোকনাথ।। ৮৮
তুমি সৃষ্টি স্থিতি লয়তোমায় প্রণিপাত। ৮৯
সগুণ নির্গুণ নাম তোমারযে গো হয়।। ৯০
প্রকাশিছে তবআলো তুমি জ্যোতির্ময়। ৯১
ক্ষুধাতুরেরক্ষুধাহারী তুমি মূর্তিমান।। ৯২
দুঃখী জনের সুখ তুমি পরমসুখন নাম। ৯৩
অলক্ষের আলেখ্যতুমি ওগো ব্রহ্মচারী।। ৯৪
সর্বজনের কাছে প্রভুতুমি শান্তি বারি। ৯৫
জানকী রাখিল নাম জাতিরজনক।। ৯৬
বিঘ্নহর নাম রাখিল তোমারসেবক। ৯৭
আজানুলম্বিত বাহু তুমি রামঅবতার।। ৯৮
চন্দ্রমা তপন আঁখিযুগলযে যুগাবতার। ৯৯
সংসার বৃক্ষ নাম দিল যতেকসংসারী।। ১০০
তুমি গুরু লোকনাথওগো ব্রহ্মচারী। ১০১
মাতা নাম দিয়া গুরু কেহতোমা ভজে।। ১০২
শ্রীরাধিকা রূপে ছিলে সখী সনে ব্রজে। ১০৩
কেউবা হেরে শ্যামরূপে কেউবা হেরে শ্যামা।। ১০৪
তুমি প্রভু মনোরম তুমিইমনোরমা। ১০৫
মৃন্ময়েতে চিন্ময় হয়ে থাকসর্বক্ষণ।। ১০৬
সর্বভূতের আত্মা প্রভুতুমি পরম ধন। ১০৭
অষ্টোত্তর শতনাম সমাপ্তহৈল।। ১০৮
|| ইতি সমাপ্ত লোকনাথ বাবার অষ্টোত্তর শতনাম ||
লোকনাথ বাবার জন্মস্থান কথায়?
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কচুয়াতে জন্ম গ্রহন করেন লোকনাথ বাবা।
লোকনাথ বাবার মৃত্যু দিবস কবে?
১’লা জুন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে।
লোকনাথ বাবার জন্ম দিবস কবে ?
১৭৩০ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর লোকনাথ বাবার জন্ম দিবস। তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।