হুমায়ুন আজাদ এর উক্তি ও বাণী সমূহ – হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, উপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, গবেষক এবং অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশের প্রথা বিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখকদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশি কবি যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতিবিদ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ১৯৮০ -র দশক থেকে পাঠক গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ ৭ টি কাব্যগ্রন্থ ১২ টি উপন্যাস ও ২২ টি সমালোচনা গ্রন্থ সব মিলিয়ে মোট ৬০ অধিক গ্রন্থ তার জীবন দশায় এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়।
হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের অধীন বিক্রমপুরের কামারগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং ২০০৪ সালের ১২ই আগস্ট তিনি পরলোক গমন করেন (মিউনিখ, জার্মানি)।
হুমায়ুন আজাদ তার জীবনে বেশ কিছু উক্তি আমাদেরকে উপহার দিয়ে গিয়েছেন। যেগুলি মানুষের চেতনা শক্তি বা বোধ শক্তি বা মানুষের ভাবনা চিন্তা সঠিক দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আসুন এক নজরে দেখে নিন হুমায়ুন আজাদের উক্তি ও বানী গুলি –
হুমায়ুন আজাদ এর উক্তি
১
“মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট করে ফেলেছে, ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম করে তুলবে।”
২
“কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়ে ছিলো এক খরগোশকে, সে গল্পে কয়েক হাজার ধরে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে সে-কথা কেউ বলে না।”
৩
“আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি করে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে করে, প্রেমকে গুনাহ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে আপত্তিকর মনে করে না।”
৪
“ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যাতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।”
৫
“নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হতে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য। কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্য মিথ্যাচারই যথেষ্ট।”
৬
“যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।”
৭
“কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা। বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী।”
৮
“এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো।”
৯
“শাড়ি পরে শুধু শুয়ে থাকা যায়, এজন্যে বাঙালি নারীদের হাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।”
১০
“আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।”
হুমায়ুন আজাদ এর বাণী
১১
“ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই ঝরে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে শয়তানের গলায়।”
১২
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না। যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।”
১৩
“শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির উপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান করে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র বছর উপভোগ করে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুন বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহুর্ত শরীর মন্থন করে।”
১৪
“সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষন বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন, কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারত চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।”
১৫
প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায়, যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।”
১৬
“যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না, কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।”
১৭
“তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার – বন্দুক ও কবর।”
১৮
“পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো, দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।”
১৯
“মিনিষ্টার’ শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাঙলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।”
২০
“অভিনেতারা সব সময়ই অভিনেতা, তারা যখন বিপ্লব করে তখন তারা বিপ্লবের অভিনয় করে। এটা সবাই বোঝে, শুধু তারা বোঝে না।”
২১
“বেতন বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।”
২২
“বাংলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।”
হুমায়ুন আজাদের নারী বিষয়ক উক্তি
১
“অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশীর কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।”
২
“পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে করে তাদের জীবন ব্যর্থ, কেননা তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারিনি।”
৩
“এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশ দূষণ, অন্যান্য সরকার গুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।”
৪
“বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয়, তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় দেবাদাসী।”
৫
“নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, কয়েকজন মহিলা আমাকে বললেন, অধ্যাপক হয়ে আমার এ বিষয়ে বই লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম, কেনো? তারা বললেন, বিষয়টি অশ্লীল!”
৬
“মহিলাদের ঘ্রাণ শক্তি খুবই প্রবল। আমার এক বন্ধু পত্নী স্বামীর সাথে টেলিফোনে আলাপের সময়ও তার স্বামীর মুখে হুইস্কির ঘ্রাণ পান।”
৭
“পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।”
৮
“কাজল ছাড়া মেয়ে, দুধ ছাড়া চায়ের মত।”
আমাদের শেষ কথা
হুমায়ুন আজাদ এর উক্তি ও বাণী গুলি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।