আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা, amla, আমলকি, Phyllanthus emblica
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুনাগুন

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুনাগুন

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা :  আমাদের সবার পরিচিত একটি ফল হল আমলকি। আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম হল Phyllanthus emblica এবং আমলকি কে ইংরেজিতে বলা হয় amla। আমলকি দেখতে ছোট গোলাকৃতি এবং এর রং হালকা হলুদ। আমলকি হল মানবদেহের জন্য সবচাইতে উপকারী একটি ভেষজ ফল। আপেল ও কমলা লেবুর তুলনায় আমলকির উপকারিতা অনেক বেশি। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা মানব শরীরে অতি প্রয়োজনীয়।

ছয়টি কমলা লেবুতে যে পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায় সেই পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায় একটি আমলকিতে। ভিটামিন-সি দেহের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এই ফলটি নিয়মিত খেলে সারবে রোগ ব্যাধি। আজকে আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং তার বিশেষ গুনাগুন আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাহলে চলুন আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আমলকির ফলন ও আমলকির গুনাগুন 

আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমলকি ফল পাওয়া যায়। আমলকির বংশবিস্তার হয় তার বীজ দিয়ে। বাজারে বেশিরভাগ সময় আমলকি পাওয়া যায় শীতকালে। বিশেষজ্ঞদের মতে আমলকি খাওয়ার সবথেকে উপযোগী সময় হচ্ছে শীতকাল। কারণ শীতকালে মানবদেহে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। প্রতিনিয়ত শীতের সকালে একটি করে আমলকি খেলে সারাবছর সুস্থ থাকে শরীর। শীতকালে যেহেতু শরীরে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সেই কারণেই শীতকালে রোগ প্রতিরোধকারী খাবার খাওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধকারী খাবার এর মধ্যে একটি অন্যতম ফল হলো আমলকি।

অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে আমলকির মধ্যে। আমলকি ও আমলকির পাতাতেও রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুন। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে আমলকি খাওয়ার প্রয়োজন। একজন বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি খাওয়ার দরকার যেটি মাত্র একটি আমলকি খেলে সম্পূর্ণ হয়। আমলকির জুস বা আমলকির রস খাওয়ার থেকে, আমলকী চিবিয়ে খাওয়া অনেক ভালো। তাই প্রতিনিয়ত একটি করে আমলকী চিবিয়ে খান।

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা, amla, আমলকি, Phyllanthus emblica
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুনাগুন

আমলকির উপকারিতা

  প্রতিনিয়ত ভিটামিন ঔষধ না খেয়ে, একটি করে আমলকি খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। রোগ নিরাময় হতে নিয়ম করে আমলকি খাওয়া প্রয়োজন। আসুন এক নজরে আমলকির উপকারিতা গুলি দেখে নেওয়া যাক।

  • আমলকি দেহের ভিটামিন সি, ভিটামিন B1 ও B2 এর ঘাটতি পূরণ করে। যাদের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে তারা আমলকী খেতে পারেন।
  • হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে আমলকি। পাশাপাশি গ্যাস জনিত সমস্যা দূর করে।
  • কোলেস্টেরলের লেভেল কম রাখতে আমলকির ভূমিকা অতুলনীয়।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সক্ষম আমলকি। নিয়মিত আমলকি খেলে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
  • বমি বমি ভাব দূর করে আমলকি। অনেক মানুষেরই বাসে, ট্রেনে উঠলে বমি বমি ভাব হয়। যার ফলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় তাদেরকে। এই ক্ষেত্রে আমলকি ভূমিকা অপরিসীম।
  • আমলকি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাথায় রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে আমলকি। হৃদয় ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
  • রক্ত পরিশোধন করতে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমলকির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কালো ছাপ দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • আমলকি খিদে ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাওয়ার আগে আমলকির সাথে অল্প মধু ও মাখন মিশিয়ে খেলে তা আরও কার্যকরী হয়। এছাড়া আমলকি টক ও তেতো, এটি খেলে মানুষের মুখের রুচি ও স্বাদ ফিরে আসে।
  • নিয়ম করে আমলকি খেলে সর্দি কাশির সমস্যা দূর হয়। তাই প্রতিনিয়ত খাদ্য তালিকায় একটি করে আমলকি রাখা প্রয়োজন।
  • আমলকি নতুন রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে এবং রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • দেহে লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আমলকি।
  • আমলকি দাঁত ও নখ মজবুত করে এবং সুস্থ রাখে।
  • অতিরিক্ত মোটা মানুষদের জন্য আমলকি খুবই প্রয়োজনীয় একটি ফল। ফ্যাট বা মেদ ঝরাতে বিশেষ সহায়তা করে আমলকি। তাই মোটা মানুষদের জন্য নিয়ম করে আমলকি খাওয়া প্রয়োজন।
  • ফ্রি র‌্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে আমলকি।
  • অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে আমলকি।
  • চোখ সুস্থ রাখতে আমলকির ভূমিকা অতুলনীয়। চোখ থেকে জল পড়া, চোখের মধ্যে ফুসকুড়ি, চোখে চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে।
  • ছোট্ট এই টক ফল চোখের সঙ্গে জড়িত সমস্ত রকম রোগী নিরাময় করতে সক্ষম। এছাড়াও চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে আমলকি।
  • নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূরীকরণে আমলকির ভূমিকা অতুলনীয়। অনেকেরই নিঃশ্বাস দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। এই দুর্গন্ধ দূর করতে নিয়মিত একটি করে আমলকি খান।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ও নবজাতক শিশুদের জন্য আমলকি খুবই ভালো।
  • বিভিন্ন রকম যৌন সমস্যা দূরীকরণে আমলকির ভূমিকা অতুলনীয়। নিয়ম করে আমলকি খেলে বাড়বে যৌন শক্তি।
  • লিভার ও জন্ডিস রোগ প্রতিকারে আমলকি একটি উপযোগী ফল।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে আমলকি। আমলকি ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ গুলি বার করে দেয়। যার ফলে শরীর থাকে রোগ মুক্ত।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে আমলকি।
  • পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূরীকরণে আমলকির ভূমিকা অপরিসীম।

 

  • আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা, amla, আমলকি, Phyllanthus emblica
    আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুনাগুন

চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা

  • বিভিন্ন রকম চুলের সমস্যা দূরীকরণে আমলকির ভূমিকা অপরিসীম।
  • চুলের রুক্ষভাব দূর করে। অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করে।
  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে আমলকি।
  • চুলের গোড়া শক্ত করে এবং খুশকি মুক্ত রাখে। তাই  যারা চুলের বিভিন্ন রকম সমস্যায় ভুগছেন, নিয়ম করে একটি করে আমলকি খান।
  • অকালপক্কতা দূরীকরণে আমলকি খুবই উপযোগী। নিয়মিত একটি করে আমলকি খেলে চুল থাকবে ঘন কালো।

read more: পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পেয়ারার গুনাগুন গুলি দেখে নিন

আমলকির অপকারিতা

আমলকি ছোট্ট একটি ফল। এটি খেতে কষ ও তেঁতো, তবে আমলকি খাওয়ার পর মিষ্টি লাগে। আমলকির জুস খাওয়ার থেকে আমলকি চিবিয়ে খাওয়া অনেক ভালো। আমলকির বিশেষ গুণ রয়েছে। তবে প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমন তার ঠিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আমলকির ও বিশেষ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আসুন এক নজরে আমলকির অপকারিতা গুলি দেখে নেওয়া যাক।

  • নিয়ম করে আমলকি খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত মাত্রায় আমলকি খেলে পরে জ্বর – সর্দি কাশি হতে পারে। সর্দি-কাশি থাকাকালীন এই ফলটি না খাওয়াই ভালো।
  • আমলকি খেলে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। খুব কম মানুষেরই আমলকি খেলে অ্যালার্জি হতে পারে।
  • অধিক মাত্রায় আমলকি খেলে, পেটের ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। অতিরিক্ত আমলকী না খেয়ে নিয়ম করে আমলকি খান।
  • হার্টের জন্য ক্ষতিকর আমলকি। অতিরিক্ত মাত্রায় আমলকি খেলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগের সমস্যা থাকলে আমলকি খাওয়ার আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • সার্জারি হলে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • স্তন্যদানকারী ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা আমলকি থেকে দূরে থাকুন।
  • প্রতিনিয়ত একটি থেকে দুটি আমলকি খাওয়া যায়। এর অধিক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে।