তুলসী পাতার উপকারিতা – আমাদের সকলের পরিচিত একটি উদ্ভিদ হল তুলসী। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে গণ্য করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলসী পাতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পূজার্চনার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে এই তুলসী গাছ একটি ঔষধি গাছও বটে। তুলসী কথার অর্থ হল, যার কোন তুলনা নেই। এই তুলসী গাছ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দু বাড়িতে লক্ষ্য করা যায় কারণ, হিন্দু ধর্মে তুলসী কে দেবি রুপে পুজো করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সর্বত্র স্থানেই তুলসী গাছ লক্ষ্য করা যায়।
তুলসী পাতা শুধুমাত্র পূজা-অর্চনার কাজেই নয়, তুলসী পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন। যার ফলে প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে তুলসী ও তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। সর্দি- কাশি ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে খুব সহজেই নিরাময় দিতে সক্ষম এই তুলসী পাতার রস। তুলসী পাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপদান। প্রতিনিয়তঃ নিয়ম করে তুলসী পাতা খেলে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। পাশাপাশি ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তুলসী তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রতিনিয়ত নিয়ম করে তুলসী পাতা খাওয়া প্রয়োজন। তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি তুলসী পাতার উপকারিতা নিয়ে। আসুন এক নজরে দেখে নিন তুলসী পাতার উপকারিতা গুলি –
তুলসী পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস্ এবং ফুস্ফুস এর মতো সমস্যা জনিতো একাধিক মারণ রোগ থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম তুলসী পাতা। এছাড়াও শরীরের কোন ক্ষতস্থানকে দ্রুত শুকিয়ে তুলতে তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী।
সর্দি কাশি নিরাময়ে তুলসী পাতার ভূমিকা অতুলনীয়। কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে। যা সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা জনিত সমস্যায় তুলসী পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু এবং একটু আদা মিশিয়ে প্রতিনিয়ত সেবন করলে এই ধরনের সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। এটি ছোট থেকে শুরু করে সকল বয়স্ক, মানুষই সেবন করতে পারেন।
মানসিক চাপমুক্ত রাখার জন্য তুলসী পাতার রস খুবই কার্যকরী। তাছাড়াও তুলসী পাতাতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ করি Anti-inflammatory উপাদান।যা মানুষের দেহের সারা দিনের চাপ ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার রস স্বাভাবিকভাবে মানুষের মানসিক চাপ নিরাময় করতে সাহায্য করে। তাই এটি প্রতিনিয়ত সকাল বেলায় সেবন করতে পারেন।
ক্যান্সারের মতো মারণ দায়ী রোগ থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতার ভূমিকা অতুলনীয়। কারণ এতে উপস্থিত রয়েছে, ‘রেডিও প্রটেক্টিভ’ উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। এই “রেডিও প্রটেক্টিভ” টিউমারের কোশ মেরে ফেলতে সক্ষম। যার ফলে ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে যায়। তবে এর পাশাপাশি Breast Cancer (ব্রেস্ট ক্যান্সার) ও রোধ করতে সক্ষম তুলসী।
তুলসী পাতার ভিতর থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মানব দেহের ভিতরে থাকা টক্সিক ও বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বের করতে সক্ষম। যা ডিহাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে এবং কিডনির কার্যকারিতা আরও সচল করতে সক্ষম।
শরীরে কোলেস্ট্রল ও রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে এবং ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এতে উপস্তিত Anti Bacterial (অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল) উপাদান দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের টুথপেস্ট ও ফেসওয়াশ তৈরি হয়। এছাড়াও তুলসী তে উপস্তিত ‘এন্টি-মাইক্রোবিয়াল ‘ উপাদান যা মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ির সমস্যা এবং দাঁতের যে কোনো রকম সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম তুলসী পাতা।
তুলসী পাতা রক্তে থাকা সুগার ও কোলেস্ট্রল এর মাত্রা কমাতে সক্ষম, এটি নিয়মিত সেবন করলে আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এছাড়াও দেহ থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমার ফলে মানসিক চাপও কমে। যার ফলে দ্রুত ওজন কমে। সাম্প্রতিক একটি বৈজ্ঞানিক সমালোচনার মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি একটি ২৫০ মিলি-গ্রাম এর ক্যাপসুল প্রতিনিয়ত সেবন করলে ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল নামক দুটি মারণদায়ী রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সক্ষম।
চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা থেকে সমাধান পেতে তুলসী পাতার ভূমিকা অতুলনীয়। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে চোখে বিভিন্ন রকমের রোগ সৃষ্টি হয়। তবে নিয়মিত তুলসী পাতা সেবন করলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা অনেকটাই কমে।
শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদ যন্ত্রের উপর চাপ কমে। তাই প্রতিনিয়ত সময় করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
মাথা ব্যাথা জনিত রোগ থেকে নিরাময় পেতে তুলসী পাতর ভুমিকা অতুলনিয়। মাথা ব্যাথা কমাতে, প্রতিনিয়ত তুলসী পাতা গুড়ো করে হারবাল চা (Hrebal tee) -এর সঙ্গে দিনে ২ বার সেবন করলে মাথা যন্ত্রণা থেকে খুব দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
বর্তমানে হার্টের সমস্যা অত্যান্ত হারে বেড়ে চলেছে। এই হার্টের সমস্যা, মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরলের ও হাইপার টেনশন -এর মতো মারণ ঘাতি রোগ জন্ম দেয় হার্টের সমস্যা। হার্ট আট্যাক এর মতো সমস্যাকে দূরে রাখতে তুলসী পাতার ভুমিকা খুবই কার্যকারী। তুলসী পাতা রক্ত জমাট বাধার মতো সমস্যা রোধ করতে সক্ষমতা বজায় রাখে। এছাড়াও তুলসী পাতা ফ্যাট ও কোলেস্টরল কমাতে সক্ষম।
অনেকেরই মাঝে মধ্যে গলাব্যথা হয়, তবে এই গলা ব্যথা রোধ করতে তুলসীর ভুমিকা অপরিসীম। কয়েকটি তুলসী পাতা গরম জলে ফুটিয়ে যদি প্রতিনিয়ত গার্গল করা হয়, তাহলে গলা ব্যথা থেকে দ্রুত নিরাময় পাওয়া যায়।
শ্বাসকষ্টের মতো কষ্টদায়ী রোগ থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম তুলসী। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে তুলসী পাতা সেবন করলে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
তুলসী পাতায় উপস্থিত সাইটোক্রোম P ৪৫০ নামক প্রোটিন রয়েছে। যা লিভারকে কোন প্রকার বিষক্রিয়া থেকে বাধা দিতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে তুলসী পাতায় উপস্থিত হেপাটোপ্রটেকটিভ উপাদান লিভারকে নষ্ট হওয়া থেকে রোধ করতে সক্ষম। তবে যদি কোন বেক্তির লিভারের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তুলসী পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অনেক মানুষেরই মুখ থেকে বাজে দুর্গন্ধ বের হয়। আর সেই কারণেই তারা যেখানে সেখানে মুখ খুলতে বা কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন। কিন্তু এই মুখের গন্ধ কাটাতে তুলসীর পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ তুলসী পাতার একটি নিজস্ব গন্ধ রয়েছে। তাই যদি তুলসী পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে নেওয়া হয় তাহলে মুখের দুর্গন্ধ অনেকটাই কমে।
মুখের ব্রণ নিরাময়ে তুলসীর উপকারিতা অতুলনীয়। তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান। যা শরীরের টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতায় রয়েছে ইউক্যালিপ্টাল উপাদান, যা ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতি নিয়ত ও নিয়ম করে তুলসী পাতা সেবন করলে হাড় বা জয়েন্টের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং বাতের ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়। এছাড়াও শরীরের যেকোনো ফোলা ভাব দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তুলসী।
রক্ত নালী সচল ও সুরক্ষিত রাখতে তুলসীর ভূমিকা অতুলনীয়। তুলসী -তে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যেটি শরীরের মাংস পেশিতে থাকা রক্ত নালী গুলোতে সুরক্ষিত ভাবে রক্ত বয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালিতে কোন রকম রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যার ফলে শরীরের মাংস পেশিতে কোনো রকম ব্যথা লক্ষ্য করা যায় না।
তুলসী পাতা তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে, তুলসী আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে। আসুন এক নজরে দেখে নিন চুলের জন্য তুলসীর উপকারিতা গুলি –
অনেক মানুষের চুলে খুশকির সমস্যা রয়েছে, তবে এই সমস্যার সমাধান করুন একদম ঘরোয়া পদ্ধতিতে। তুলসী পাতায় রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণ যা চুলের বিশেষ সমস্যা, সমাধান করতে সক্ষম। চুলের খুশকি নিরাময়ে তুলসী পাতার ভূমিকা অতুলনীয়। তবে কীভাবে ব্যবহার করবেন জানুন – কীভাবে ব্যবহার করবেন – প্রতিনিয়ত আপনি যে তেলটি ব্যবহার করেন, সেই তেলের সঙ্গে তুলসী পাতা বেটে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর সেটি মাথার চুলে ভালভাবে লাগিয়ে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভালোভাবে শুকানোর পর এটি ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি নিয়মিত ব্যাবহারে চুলের খুশকি রোধ হয়।
তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়ার মতো সমস্যা থেকে সমাধান দিতে সাহায্য করে। তবে এটি কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জেনে নিন – কীভাবে ব্যবহার করবেন – স্নান করার পূর্বে আপনি যে তেলটি ব্যবহার করেন, সেই তেলের সঙ্গে কয়েকটি তুলসী পাতা বেটে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং সেটি স্নান করার পূর্বে ভালোভাবে মাথায় লাগিয়ে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট এটি মাথায় লাগিয়ে রাখার পর ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়ার মতো সমস্যা থেকে সমাধান দেয় এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
তুলসী খাওয়ার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। তবে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে বহু। আসুন খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলি জেনে নিন –
তুলসী পাতার অপকারিতা – তুলসী পাতা তে রয়েছে একাধিক ঔষধি গুনাগুন। যার ফলে তুলসী পাতা খাওয়ার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। তবে তুলসী পাতার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি তার ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। নিয়ম করে তুলসী পাতা খাওয়া ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে হতে পারে হিতে বিপরীত। তাই নিয়ম করে তুলসী পাতা খান। অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে তা কি আপনি জানেন? যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে আসুন জেনে নিন তুলসী পাতার অপকারিতা গুলি –
আমাদের শেষ কথা
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই পোষ্টটি আপনার পড়ে ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এরকম সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।
মোঃ হেদায়েতুল ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও বাণী - আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব…
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের ১০৮ নাম - জগদ্বন্ধু সুন্দর ১৮৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়…
হ্যাপি হোলির শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস বা দোলযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।…
মার্ক টোয়েনের উক্তি ও বাণী - মার্ক টোয়েন ছিলেন একজন মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক ও প্রভাষক।…
কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী - কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বিংশ শতাব্দীর প্রধান…
সক্রেটিসের উক্তি ও বাণী সমুহ - সক্রেটিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। সক্রেটিসের তেমন কোন…