ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা – ডিম খেতে কে না পছন্দ করে। কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত ডিম খেতে ভয় পান। ডিম খেলে কোন ভয় নেই। ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি খাদ্য। একাধিক গবেষণা কেন্দ্র থেকে জানিয়েছে অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতা জনিত সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম ডিম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যা, মহিলা এবং শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। যে কারণে ডিম মহিলা এবং শিশুদের একটু বেশি খাওয়া উচিত।
একটি ডিমে একাধিক কার্যকরী উপাদান রয়েছে, যেগুলি মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ডিমে কি কি উপাদান রয়েছে এবং ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। একটি ডিমে এনার্জি রয়েছে ১৪৩ ক্যালরি, প্রোটিন রয়েছে ১২.৫৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ০.৭২ গ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিংক রয়েছে ১.২৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস রয়েছে ১৯৮ মিলিগ্রাম এবং ফ্যাট রয়েছে ৯.৫১ গ্রাম।
এনার্জি | ১৪৩ ক্যালরি |
প্রোটিন | ১২.৫৬ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ০.৭২ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৩৮ মিলিগ্রাম |
জিংক | ১.২৯ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৯৮ মিলিগ্রাম |
লিপিড | ৯.৫১ গ্রাম |
সোডিয়াম | ১৪২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | এ ৫৪০ IU |
ভিটামিন ডি | ৮২ IU |
শিশুদের দৈহিক বিকাশ, মেধার বিকাশ এবং হাড় শক্ত করতে ডিম খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে ডিম। কারণ এতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ (Vitamin A) এবং মানুষের হাড় শক্ত করতে ডিমে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন-ডি (Vitamin D)। সেই কারণে অনেক ডায়েটিশিয়ান -রাও প্রতিদিন সকালে একটা করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ডিম ভাজা খাওয়ার থেকে হাফ বয়েল অথবা সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা বেশি।
আমরা তো সকলেই ডিম খাই, তবে কবে বিশ্ব ডিম দিবস তা কি আমরা জানি? একটি আন্তর্জাতিক এগ কমিশনের কনফারেন্সে, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই অনুযায়ী অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালন করা হয়।
ডিম যেমন খেতেও সুস্বাদু, তেমন দামও সাধ্যের মধ্যে। তবে এই ডিম সম্পূর্ণ পুষ্টিগুনে পরিপূর্ণ। কিন্তু আমরা হয়তো ডিমের উপকারিতা নিয়ে অনেকেই জানিনা। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে হাজির হয়েছি। আসুন একনজরে দেখে নিন ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি –
অনেকেই মনে করেন, ডিম খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু ডিম ওজন বারানোর থেকে ওজন কমতে বেশি সাহায্য করে । ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনে ভরপুর এবং ওই অংশে কোনরকম ফ্যাট নেই বললেই চলে। পেট অনেকক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে ডিম। আর পেট ভরা থাকলে খাওয়ার চাহিদাও কমে যায়, যার ফলে শরীরের ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে চাইলে ডিম খেতে পারেন অনায়াসে।
মানব দেহে এনার্জি বাড়াতে ডিম খুবই উপকারি একটি খাদ্য। ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা শরীরে এনার্জি উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ডিম খেলে শরীর সুস্থ সবল থাকে। সেই জন্য প্রতিনিয়ত ডিম খাওয়ার কথা জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
ক্যান্সারের মতো মারণরোগ থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম ডিম। কারণ ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং লিউটিন নামক উপাদান, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা ডিম খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডিমের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ডিমে উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, অন্টিজেনিক অন্টিজেনিক বায়ো অ্যাক্টিভ, লিউটিন, জিংক এবং জিয়াজেনথিন নামক উপাদান। পুষ্টিবিদ্যারা জানিয়েছে যে হাড়ের সমস্যা এবং বাতের ব্যথার সমস্যা থেকে নিরাময় পেতে হলে প্রতিনিয়ত ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে ডিম খুবই উপকারী একটি খাদ্য। ডিমে উপস্থিত রয়েছে লিউটিন নামক ক্যারোটিনয়েড উপাদান, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য। বয়স বারার সাথে সাথে চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম ডিম।
ডিমে উপস্থিত রয়েছে নানা ধরনের প্রোটিন। অনেক ডাক্তার অন্যান্য খাবার খাওয়ার বদলে নিয়মিত ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ ডিম দেহের পক্ষে খুবই উপকারী একটি খাদ্য।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ডিম। কারণ ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে। তাই সুন্দর এবং সজীব ত্বক যদি পেতে চান, তাহলে প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ডিম খান।
পুষ্টিবিদদের মতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের সমস্যা বেশি লক্ষ করা যায়। তবে এই ধরনের সমস্যা থেকে নিরাময় দিয়ে সক্ষম ডিম। প্রতিনিয়ত যদি নিয়ম করে ডিম খাওয়া হয় তাহলে মস্তিষ্ক সুস্থ-সবল ও ভাল থাকে। তাই মস্তিষ্ক ভাল রাখতে ডিম খেতে পারেন।
ডিম সম্পূর্ণ রুপে প্রোটিনে ভরপুর একটি খাদ্য। মানবদেহের পেশির সংশ্লেষক (সিন্থেসিস) ঘটাতে প্রোটিনের খুবই প্রয়োজন। আর এই প্রোটিন উপস্থিত রয়েছে ডিমে। এছাড়াও যারা প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করে থাকেন, তাদের দেহের পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ক্লান্তি ভাব দূর করতে সক্ষম ডিম।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে এবং গর্ভে থাকা বাচ্চাকে সঠিক পুষ্টি প্রদান করার জন্য গর্ভবতী মহিলাকে ডিম খাওয়ানো অতান্ত প্রয়োজন। ডেলিভারি হওয়ার পর শিশু এবং মাকে সুস্থ-সবল রাখতে সাহায্য করে ডিম। এছাড়াও মাতৃ দুগ্ধকে পুষ্টিতে পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করে এই ডিম।
চুলের বৃদ্ধিতে ডিম খুবই উপকারী একটি খাদ্য। কারণ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও প্রোটিনে ভরপুর, যা চুলের প্রকৃত খাদ্য বলতে পারেন। তাই চুলের যত্ন নিতে ডিম চুলে ব্যবহার করতে পারেন এবং খেতেও পারেন।
কাঁচা ডিমের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন বি (Vitamin B), ভিটামিন ই (Vitamin E), ভিটামিন বি সিক্স (Vitamin B 6) এবং প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ। তাছাড়াও কাঁচা ডিমে উপস্থিত রয়েছে পুষ্টিকর কোলিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জেক্সানথিন নামক উপাদান। গবেষকরা জানিয়েছেন কাঁচা ডিমের চেয়ে সিদ্ধ ডিম অথবা হাফ বয়েল ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়।
ডিম সিদ্ধ শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। সিদ্ধ ডিম স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদযন্ত্র কে সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পেশীর যে কোন সংবেদন মস্তিস্কে পৌঁছাতে সাহায্য করে। মানবদেহের মস্তিষ্কের ঝিল্লি গঠন করতে সিদ্ধ ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের মেমব্রেন ও পেশি সুগঠিত রাখতে সাহায্য করে এবং চুল, নখ ও চখের জন্য খুবই উপকারী সিদ্ধ ডিম।
ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, অ্যামাইনো এসিড, এবং প্রোটিন। অন্যদিকে দুধে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন। শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করেতে দুধ এবং ডিম এক সঙ্গে খেতে পারেন। দুধ ও ডিম দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় মানবদেহের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে দুধ ও ডিম।
ডিম যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। কিন্তু গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ডিম ভাজা বা কাঁচা খাওয়ার থেকে সিদ্ধ করে খাওয়া সবথেকে ভাল। যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। কারণ সিদ্ধ ডিমে ক্যালরির পরিমাণ সীমিত পরিমাণে উপস্থিত। সিদ্ধ ডিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রত্যেকট খাবারের যেমন ভাল দিক থাকে, তেমনি তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে। সেই অনুযায়ী ডিমের একাধিক ভালো গুন এর পাশাপাশি, কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে ডিম খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নে একটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আসুন এক নজরে দেখে নিন ডিমের অপকারিতা গুলি –
আমাদের শেষ কথা
ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।
মোঃ হেদায়েতুল ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও বাণী - আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব…
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের ১০৮ নাম - জগদ্বন্ধু সুন্দর ১৮৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়…
হ্যাপি হোলির শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস বা দোলযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।…
মার্ক টোয়েনের উক্তি ও বাণী - মার্ক টোয়েন ছিলেন একজন মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক ও প্রভাষক।…
কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী - কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বিংশ শতাব্দীর প্রধান…
সক্রেটিসের উক্তি ও বাণী সমুহ - সক্রেটিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। সক্রেটিসের তেমন কোন…