লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা – লেবু আমাদের সকলেরই সুপরিচিত একটি ফল। ঔষধ তৈরি থেকে শুরু করে রান্নার কাজে এবং খাওয়ার কাজে ব্যবহারিত লেবু। ভারতের আসাম ও চীনে লেবু প্রথম ব্যবহার হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে লেবু বহুকাল আগে থেকেই ঔষধ রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি (Vitamin C) এবং একাধিক পুষ্টি গুন। যা শরীরের নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম।
গৃষ্মকালে ডিহাইড্রেট এর মতো সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। এই ডিহাইড্রেট এর ফলে হার্ট স্ট্রোকও হতে পারে, হার্ট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য লেবুর জল খুবই কার্যকরী। তার কারণ লেবুর রসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও মিনারেল পাওয়া যায়। ওজন কমানোর জন্য লেবু খুবই উপকারী।
ফাইবার | ৫.৯ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৫৫.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৪৬.৬ IU |
ভিটামিন সি | ১১২ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.৩ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪০ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ২৩.৩ মিলিগ্রাম |
সাইট্রিক অ্যাসিড | ৪৭ গ্রাম/লিটার |
পটাসিয়াম | ২৯৩ মিলিগ্রাম |
লেবু পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল, যেটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমরা হয়তো লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি লেবুর উপকারিতাা ও অপকারিতা। আসুন একনজরে দেখে নিন লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি –
স্ট্রোকের এর মত সমস্যা, বেশিরভাগ মহিলাদেরই হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাইট্রাস ফল বা লেবু খুবই উপকারী। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা লেবু সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খেয়েছে তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি নিম্নতম ১৯ শতাংশ কম মানুষের ছিল। ২০১৯ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিনিয়ত নিয়মিত করে লেবু বা সাইট্রাস এর মত ফল সেবন করেছেন, তারা ক্যান্সার বা কার্ডিওভারকুলার এর মত মারণ রোগ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর ভূমিকা অতুলনীয়। কারণ লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা মানবদেহের ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার উৎপাদনকারী কোষ গুলি কে মেরে ফেলতে সক্ষম।
লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি ব্রংকিয়াল হাইপার সেনসিটিভিটির মত মারণ রোগ এর হাত থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম। ভিটামিন সি এর অভাবে হাঁপানি এবং সর্দি কাশির মত রোগ হতে পারে।
শরীরে আয়রনের ঘাটতির ফলে রক্তাল্পতার মত রোগ দেখা দিতে পারে। তবে আয়রনে সমাদৃত খাবারের সঙ্গে যদি ভিটামিন সি (লেবু) খাবার মিশ্রণ করে খাওয়া যায় তবে আয়রনের ঘাটতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিনিয়ত নিয়ম করে লেবু খেতে পারেন।
শরীরের ওজন কমাতে লেবু খুবই উপকারী একটি ফল। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে পেলিফেনল উপাদান যা স্থূলত্ব বা ওবিসিটি নামক রোগ থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম। লেবুতে উপস্থিত পেলিফেনল শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং ফ্যাট বৃদ্ধির হাত থেকে নিরাময় দিতে সাহায্য করে। শরীরে চর্বি এবং ওজন বৃদ্ধির ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের মতো নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত ঝুকি থাকে। তবে এই ধরনের রোগের হাত থেকে নিরাময় পেতে লেবু দিয়ে তৈরি “ডিটক্স ডায়েট” নামক সিরাপ সেবনে করতে পারেন। এটি শরীরের চর্বি বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু খুবই উপকারী একটি ফল। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। লেবুতে উপস্থিত এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকাই লেবু রাখা প্রয়োজন।
কিডনি স্টোন এর মত সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে লেবু খুবই উপকারী একটি খাদ্য। কারণ লেবুতে উপস্থিতি রয়েছে সাইট্রেট নামক উপাদান যা কিডনিতে যে কোন পাথর বা স্টোন হওয়া থেকে রোধ করতে সক্ষম। কিডনিতে যদি বড় পাথর থেকে থাকে, তবে ওই পাথরকে ভেঙে মূত্রের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে সাইট্রেট। কিডনি স্টোন এর মত সমস্যা থেকে নিরাময় পেতে প্রতিনিয়ত নিয়ম করে লেবু খান।
লেবু আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি খাদ্য। আপনারা কি জানেন, লেবুর চেয়ে লেবুর খোসায় বেশি পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন রয়েছে। লেবুর খোসায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়া, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরকে সুস্থ-সবল ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য খুবই সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লেবুর রস এবং লেবুর খোসা খাওয়া দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তো চলুন এক নজরে দেখে নিন লেবুর খোসার উপকারিতা গুলি –
ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর রসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি লেবুর খোসারও উপকারিতা রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার হয়ে থাকে। লেবুর খোসায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লিমন এবং সালভেস্ট্রোল কিউ ৪০। যা মানবদেহে উপস্থিত ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাই জানা গেছে যে, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে লেবুর খোসা খুবই উপকারী। লেবুর খোসায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্ষারীয় উপাদান, যা আমাদের শরীরের পিএইচ উপাদানের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে লেবুর খোসাই উপস্থিত রয়েছে পেনিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান। যা মানবদেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লেবুর খোসা খুব উপকারী। লেবুর খোসায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ত্বক থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
স্ট্রেস কমাতে লেবুর খোসার ভূমিকা অপরিসীম। লেবুর খোসাতে উপস্থিত রয়েছে সাইট্রাস বায়ো ফ্লেভোনয়েড উপাদান, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে লেবুর উপকারিতা
লেবুর রসে উপস্থিত রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়ামসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান। যেগুলি চুলের যত্নে খুবই উপকারী। লেবুর রস দিয়ে হেয়ার প্যাক বানাতে পারেন এবং লেবুর রসের হেয়ার প্যাক চুলে ব্যাবহার করলে চুল যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, তেমনি চুল পড়া রোধ হবে। লেবুর রস দিয়ে কিভাবে হেয়ার প্যাক বানাবেন জেনে নিন –
১ চামচ অ্যালোভেরার জেলর সঙ্গে পরিমাণ মতো লেবুর রস নিন এবং এটি ভালো ভাবে মিশ্রণ করুন। তারপর ওই মিশ্রণটি ২০ থেকে ২৫ মিনিট মাথায় এবং চুলে লাগিয়ে রাখুন। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই জেলটি মাথায় লাগালে চুল পড়া থেকে মুক্তি পাবেন।
চুলের গোড়া শক্ত করতে ৩ চামচ আমলকীর তেল এবং ২ চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশন করুন এবং শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি মাথায় লাগান। এই মিশ্রণটি মাথায় লাগানোর ৫ মিনিট পর হালকা গরম জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এটি কয়েক দিন ব্যবহার করলে এর উপকার বুঝতে পারবেন।
শরবত খেতে সবাই পছন্দ করেন। আর লেবুর শরবত তো সবারই পছন্দ। তবে লেবুর শরবত কিভাবে বাড়িতে বানাবেন তার পদ্ধতি কি আপনাদের জানা আছে। কিভাবে লেবুর শরবত বানাতে তার কিছু পদ্ধতি আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আসুন এক নজরে দেখে নিন কিভাবে লেবু দিয়ে শরবত তৈরির পদ্ধতি গুলি –
আদা, পুদিনা ও লেবুর শরবত বানাতে গেলে প্রথমে একটি পাত্র নিতে হবে এবং ওই পাত্রে পরিমাণ মতো জল নিতে হবে। ওই জলে এক চা-চামচ আদা কুচি দিতে হবে। পুদিনা পাতা দিতে হবে ১০ থেকে ১২ টি এবং পরিমাণ মতো লেবুর রস ও অল্প পরিমাণে চিনি। এছাড়াও অল্প পরিমাণে লবণ দিতে হবে। সব উপাদান গুলি একত্রে মিক্সার গ্রাইন্ডার এর ফেলে মিক্সড করে নিন। ব্যাস তৈরি আপনার আদা, পুদিনা ও লেবুর শরবত।
রুহ-আফজা লেবুর শরবত –
রুহ-আফজা লেবুর শরবত তৈরি করতে গেলে প্রথমে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো জল দিতে হবে কমপক্ষে দেড় কাপ। ওই জলে পরিমাণমতো চিনি, পরিমাণ মত লবণ এবং পরিমাণ মতো রুহ-আফজা দিতে হবে। সব উপকরণ গুলি মেশালে তৈরি হয়ে যাবে আপনার রুহ-আফজা লেবুর শরবত।
শসা ও লেবুর শরবত তৈরি করতে গেলে আপনাকে প্রথমে নিতে হবে একটি শসা। শসা টিকে ছোট ছোট করে কেটে একটি মিক্সার গ্রাইন্ডার পরিমাণমতো জলের সঙ্গে মিক্সড করে নিতে হবে। তারপর সেটি একটি জুসে পরিণত হবে। আবার এটিকে ছেঁকে নিয়ে একটি গ্লাসে ঢেলে রাখতে হবে। শসার জুস বা রসের সঙ্গে এক গ্লাস জল দিতে হবে। ওই শসার রসের মধ্যে ৩ চামচ চিনি এবং পরিমাণমতো লেবুর রস দিতে হবে। সর্বশেষে দিতে হবে সামান্য একটু সাধারণ লবণ এবং 1 চা চামচ বিট লবণ। সব উপকরণ গুলি একসঙ্গে মিশ্রণ করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার শসা লেবুর শরবত।
লেবুর অপকারিতা
প্রত্যেক খাবারের যেমন ভালো গুন থাকে তার পাশাপাশি তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। সেই অনুযায়ী লেবুর যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়ার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে নিম্নে তার বর্ণনা দেয়া হলো। তো আসুন একনজরে দেখে নিন লেবুর অপকারিতা গুলি-
লেবুতে উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস্ট উপাদান। যে সকল মানুষ সাইট্রাস্ট ত্বকে ব্যবহার করে রোদ্দুরে যান, তাদের ত্বক রোদে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই রোদ্দুরে বেরোনোর আগে কেউ লেবু স্ক্রিনে ব্যবহার করবেন না।
আমাদের শেষ কথা
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লেবু খাওয়ার নিয়ম সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধটি আপনার পড়ে ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।
মোঃ হেদায়েতুল ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও বাণী - আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব…
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের ১০৮ নাম - জগদ্বন্ধু সুন্দর ১৮৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়…
হ্যাপি হোলির শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস বা দোলযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।…
মার্ক টোয়েনের উক্তি ও বাণী - মার্ক টোয়েন ছিলেন একজন মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক ও প্রভাষক।…
কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী - কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বিংশ শতাব্দীর প্রধান…
সক্রেটিসের উক্তি ও বাণী সমুহ - সক্রেটিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। সক্রেটিসের তেমন কোন…