পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা – পেঁয়াজ হল আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে কোনো খাবারের সাদ দ্বিগুণ ভাবে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম পেঁয়াজ। পেঁয়াজ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান। এটি আমরা সাধারণত রান্নার মসলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি।তবে বহুগুন সম্পন্ন উপাদান রয়েছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস নানা ধরনের জটিল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে পেঁয়াজের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত।
পেঁয়াজে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন এ (Vitamin A), ভিটামিন সি (Vitamin C), ও ভিটামিন ই (Vitamin E), অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রসে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। পেঁয়াজে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান গুলি নিন্মে তালিকাভুক্ত করা হল –
জল | ৪% |
প্রোটিন | ৫ গ্রাম |
ক্যালোরি | ১১৫ কিলো ক্যালোরি |
টোটাল ফ্যাট | ২ গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.৫ গ্রাম |
মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ১.৪ গ্রাম |
পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড | ০.৩ গ্রাম |
পেঁয়াজ হল একটি দ্বিবর্ষী বা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হওয়ার ফলে এটি বার্ষিক ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান এবং আমরা প্রায় সকলেই এটি খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা হয়তো পেঁয়াজের উপকারিতা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। তো চলুন আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলেধরেছি পেয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা। আসুন এক নজরে দেখে নিন পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি –
যে সকল ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার এর মতো সমস্যা রয়েছে, সে সকল ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত নিয়ম করে যদি ২ চা চামচ পেঁয়াজের রস সেবন করেন। তাহলে হার্টের সমস্যা এবং কার্ডিওভাসকুলার এর মত রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও পেঁয়াজের রস সেবন করলে আমাদের রক্তনালী গুলি শীতল এবং রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। তবে যদি কোন ব্যক্তির হার্টের সমস্যা থেকে থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই পেঁয়াজ সেবন করবেন।
একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে তুলতে সাহায্য করে পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস। এক গবেষণা করে জানা গেছে চোখের পাতায় হওয়া অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ধর্ম, ব্লেফেরাইটিস এবং কনজেক্টিভাইটিস নামক রোগের মতো চিকিৎসায় পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে চোখের কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। প্রিভেনটিভ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সাইন্সের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে পেঁয়াজের রস হাইপোগ্লাইসেমিক (Hypoglycemia) গুন সম্পন্ন একটি উপাদান। যা শরীরে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে ডায়াবেটিসের হাত থেকেও খুব সহজেই নিরাময় পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে পেঁয়াজের রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
সর্দি-কাশির মত সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। পেঁয়াজের রসের সঙ্গে যদি একটু আদা এবং তুলসী পাতা একত্রে মিশ্রণ করে ওই মিশ্রণটি সেবন করা যায়, তাহলে বুকের ব্যথা এবং সর্দি-কাশির মতো সমস্যার হাত থেকে নিরাময় পাবেন। এই মিশ্রণটি সেবানের ফলে এলার্জি, সামান্য গা ব্যথা, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বর এর মত সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
ক্যান্সারের মত মারন রোগের হাত থেকে নিরাময় দিতে পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রসের ভূমিকা অতুলনীয়। কারণ পেঁয়াজের রসে এবং পেঁয়াজে উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন, কোয়ারসেটিন, অর্গান সালফার এর মত উপাদান। বহু কাল আগে থেকেই এই উপাদান গুলি ক্যান্সারের মতো মারন ব্যাধি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। পেঁয়াজের রসে উপস্থিত ফাইবার, কোলন ক্যান্সারের জীবাণু ও কোশ গুলিকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজের রস প্রতিনিয়ত সেবন করলে, দেহে উপস্থিত জিন টক্সিসিটি নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান গুলি শরীর থেকে নিসৃত হয়। তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্যান্সারের মতো মারণরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পেঁয়াজ সেবন করবেন।
পেঁয়াজের রসের সঙ্গে ঘুমের একটা সু-সম্পর্ক রয়েছে। একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজের রসে এক ধরনের কার্যকরী সিডেটিভ গুণ সমৃদ্ধ উপাদান উপস্থিত রয়েছে। পেঁয়াজের রসে উপস্থিত রয়েছে এক ধরনের ফুলেট নামক উপাদান, এই উপাদানটি মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই ফুলেট নামক উপাদানটি মানবদেহের শরীরে ডোপামিন এবং এপিনেফ্রিন এর মত ফিল গুড হরমোন (Feel-Good Hormone) উৎপাদন করতে সাহায্য করে থাকে। তাই অনিদ্রা ভাব কাটাতে পেঁয়াজ খেতে পারেন।
পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পেঁয়াজে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম নামক এক নিউট্রিয়েন্ট উপাদান যা মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থাকে উন্নতি করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পেঁয়াজের ভূমিকা কতটা? তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
অনেকেরই কানের ইনফেকশন বা কানে যন্ত্রণায় ভুগছেন। তবে এই কানের সমস্যা থেকে নিরাময় পেতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন, অনেক উপকার পাবেন। ইংল্যান্ডে উপস্থিত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, কানের যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। এছাড়াও একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজের রস কুসুম গরম করে কানের ব্যথা জায়গায় প্রলেপ দিলে ব্যথা থেকে নিমেষেই মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কানের কোনরকম সমস্যা থেকে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
আমাদের সকলেরই একটা বয়সের পর বার্ধক্য ছাপ দেখা দেয়। তবে অনেকের বয়স উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই বার্ধক্য ছাপ দেখা যায়। একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজের রসের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টউপাদান যা অকাল বার্ধক্য ছাপ এর হাত থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলির সাহায্যে বার্ধক্য ছাপের প্রভাব কমে আসে। বার্ধকের ছাপ কমানোর ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রসকে এক মহা ঔষধ হিসেবে ধরা হয়।
ব্রণ এবং অ্যাকনের মতো সমস্যা প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমানে আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও আন্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যার হাত থেকে নিরাময় দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজের রসে আন্টি-ফাঙ্গাল এবং আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান উপস্থিত থাকার কারণে ত্বকে ব্রন এবং অ্যাকনের মত সমস্যা সৃষ্টিকারী জীবাণুকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজের রস ব্রণ এবং অ্যাকনের মতো সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে খুবই উপকারি একটি উপাদান।
চুলের যত্ন বা স্বাস্থ্যের জন্য পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, চুলের বিকাশের জন্য পেঁয়াজের রস একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পেঁয়াজের রসে উপস্থিত রয়েছে সালফার যা দ্রুত চুল বাড়াতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোপেশিয়া এরেটার মতে চুল পড়া সমস্যা দূর করতে পেঁয়াজের ভুমিকা অতুলনীয়।
পেঁয়াজের নির্যাস তৈরি করার জন্য চারটে মাঝারি আকৃতির পেঁয়াজ নিতে হবে (আপনার হিসেবে আপনি কম অথবা বেশি নিতে পারেন)। তারই সঙ্গে নিতে হবে এক গ্লাস জল। ওই চারটে পেঁয়াজ এবং এক গ্লাস জল একত্রে একটি মিক্সারে দিয়ে ভালো করে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর একটি সুতির কাপড়ের সাহায্যে রসটা ছেঁকে একটি আলাদা গ্লাসে রাখতে হবে। এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে পেঁয়াজের নির্যাস (রস)।
আমরা সকলেই প্রায় উপরের উপকারিতা গুলো পড়েছি। তার মধ্যে শুনতে পেয়েছি পেঁয়াজের রসের নাম। কিন্তু এই পেঁয়াজের রস কিভাবে ব্যবহার করব আমরা হয়তো সেটা জানিনা। তো চলুন এক নজরে দেখে নিন পেঁয়াজের রস ব্যবহার করার কিছু নিয়মাবলী-
প্রত্যেক উপাদানের যেমন ভালো দিক থাকে তেমন তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। সেই অনুযায়ী পেঁয়াজের ভালো দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁয়াজ ব্যবহারের ফলে, কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিম্নে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তো চলুন এক নজরে দেখে নিন পেঁয়াজের অপকারিতা গুলি-
আমাদের শেষ কথা
পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধনটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং এই ধরনের সুন্দর সুন্দর আরো পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।
মোঃ হেদায়েতুল ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও বাণী - আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব…
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের ১০৮ নাম - জগদ্বন্ধু সুন্দর ১৮৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়…
হ্যাপি হোলির শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস বা দোলযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।…
মার্ক টোয়েনের উক্তি ও বাণী - মার্ক টোয়েন ছিলেন একজন মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক ও প্রভাষক।…
কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি ও বাণী - কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বিংশ শতাব্দীর প্রধান…
সক্রেটিসের উক্তি ও বাণী সমুহ - সক্রেটিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। সক্রেটিসের তেমন কোন…