১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
চাণক্য নীতি বাণী (চাণক্যের বাণী) – কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিত, দার্শনিক ও উপদেষ্টা ছিলেন। চাণক্য নামে তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। অর্থশাস্ত্র নামক একটি রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন কৌটিল্য বা চাণক্য। এছাড়াও প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে একজন দিকপাল ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থের জন্য এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পান্ডিত্যের জন্য ভারতের মেকিয়াভেলি বলা হয় চাণক্যকে।
তবে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনের শেষের দিকে চাণক্যের রচনা অবলুপ্ত হয়। এরপর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ফের চাণক্যের রচনা পুনরাবিষ্কৃত হয়। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্থানে প্রধান ভূমিকা পালন করেন চাণক্য। তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং তার পুত্র বিন্দুসারের রাজ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রাচীন ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করেন কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত বা চাণক্য। কিন্তু পরবর্তীকালে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় আশ্চর্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চাণক্য বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন এবং বেদ সম্বন্ধে একজন পন্ডিত ছিলেন।
চাণক্য নীতি বা চাণক্যের বাণী গুলি এতটাই কার্যকরী যার ফলে প্রতিটি মানুষ তার সাফল্যে পৌঁছাতে আজও চাণক্যের বাণী ও চাণক্য নীতি গুলি অনুসরণ করে থাকেন। কারণ বুদ্ধি এবং রাজনৈতিক বিবেক ও বল দ্বারা নন্দন রাজবংশের সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কে অখন্ড ভারতের রাজাসনে বসিয়েছিলেন চাণক্য।
তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে জীবন বদলে দেওয়ার মত ১০০ টি চাণক্যের বাণী আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আসুন এক নজরে দেখে নিন চাণক্য নীতি বা চাণক্যের বাণী গুলি –
চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani in Bengali
“বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী – এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।”
“মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
”রাতের ভূষণ চাঁদ, নারীর ভূষণ পতি, পৃথিবীর ভূষণ রাজা, কিন্তু সবার ভূষণ বিদ্যা।”
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
“ইন্দ্রিয়ের যে অধীন তার চতুরঙ্গ সেনা থাকলেও সে বিনষ্ট হয়।”
“একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়।”
”একটিমাত্র বৃক্ষে লাগা আগুনের দ্বারা যেমন সম্পূর্ণ বন ভস্মে পরিণত হতে পারে তেমনি একজন কুপুত্রের দ্বারাও সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হতে পারে।“
“একজন পন্ডিত ব্যক্তিও ঘোর দুঃখ-কষ্টের স্বীকার হতে পারেন যদি সে, একজন মূর্খ ব্যক্তিকে উপদেশ দেন অথবা কোনো দুষ্ট স্ত্রীর ভরন পোষণে লিপ্ত হন কিংবা কোনো দুঃখী ব্যক্তির সাথে দৈনন্দিন সম্পর্ক স্থাপন করেন।“
“হাতি থেকে একহাজার হাত দূরে, ঘোড়া থেকে একশ হাত দূরে, শৃঙ্গধারী প্রাণী থেকে দশহাত দূরে থাকবে। অনুরূপ দুর্জনের কাছ থেকেও যথাসম্ভব দূরে থাকবে।”
“যেইসব শিক্ষার্থীরা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে নষ্ট করে আর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঘুমানো পছন্দ করে, সেইসব শিক্ষার্থীরা জীবনে সফল হতে পারেনা এবং তারা বেশিরভাগ কাজ ঠিক মতো করতে অক্ষম হয়।”
“শাস্ত্র অনন্ত, বিদ্যাও প্রচুর। সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক। তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত। হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়, তেমনি।”
“পরস্ত্রীকে যে মায়ের মত দেখে, অন্যের জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে করে এবং সকল জীবকে যে নিজের মত মনে করে, সে-ই যথার্থ জ্ঞানী।”
“তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়: নিজের পত্নীতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু অধ্যয়ন, জপ, আর দান এই তিন বিষয়ে যেন কোনও সন্তোষ না থাকে।”
“বিদ্যাবত্তা ও রাজপদ এ-দুটি কখনও সমান হয় না। রাজা কেবল নিজদেশেই সমাদৃত, বিদ্বান সর্বত্র সমাদৃত।”
“গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে এমন কোনও জিনিস নেই, যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে।”
“বইয়ে থাকা বিদ্যা, পরের হাতে থাকা ধন একইরকম। প্রয়োজন কালে তা বিদ্যাই নয়, ধনই নয়।”
”প্রতিবেশী দেশের সাথে সন্ধি হলেও তার গতিবিধিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।“
“অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়। মানই মহতের ধন।”
“বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নাই, ব্যাধির চেয়ে শত্রু নাই। সন্তানের চেয়ে স্নেহপাত্র নাই, দৈবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বল নাই।”
“দারিদ্র্য, রোগ, দুঃখ, বন্ধন এবং বিপদ- সব কিছুই মানুষের নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল।”
“যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
“অনেকে চারটি বেদ এবং ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে না, হাতা যেমন রন্ধন-রস জানে না।”
“আদর দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ, তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়।”
“অলস শিক্ষার্থীরা ঠিক ততটাই জ্ঞান অর্জন করতে পারে, যতটা তাদের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন।”
“বিদ্বান সকল গুণের আধার,অজ্ঞ সকল দোষের আকর। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।”
”পুত্রকে যারা পড়ান না,সেই পিতামাতা তার শত্রু। হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা পায় না, সভার মধ্যে সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।“
“সাধুগণ সকল জীবকেই তাঁর কৃপা প্রদান করে, এমনকি যাদের সদগুণ নেই তাদেরও। ঠিক যেমন সমাজচ্যুত ব্যক্তির ঘরে আলো বিতরণ করতে চাঁদও বিরত থাকেনা।“
”বুদ্ধিমান ব্যক্তির এই ৫টি জায়গায় যাওয়া উচিত নয়-ক.যেখানে রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। খ.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো ভয়ডর নেই। গ.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই। ঘ.যেখানে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বসবাস করেনা। ঙ.যেখানে মানুষ দান-ধর্মের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে।”
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
“আকাশে উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়, কিন্তু প্রচ্ছন্নপ্রকৃতি-কর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়।”
“অন্তঃসার শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় না, মলয়-পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না।”
“নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না, নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও কখনও মধুর হয় না।”
“বিষ থেকেও অমৃত আহরণ করা চলে, মলাদি থেকেও স্বর্ণ আহরণ করা যায়, নীচজাতি থেকেও বিদ্যা আহরণ করা যায়, নীচকুল থেকেও স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করা যায়।”
“গৃহে যার মা নেই, স্ত্রী যার দুর্মুখ তার বনে যাওয়াই ভাল, কারণ তার কাছে বন আর গৃহে কোনও তফাৎ নেই।”
“একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণী পুত্র বরং ভাল। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না।”
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
“বিদ্যাভূষিত হলেও দুর্জনকে ত্যাগ করবে, মণিভূষিত হলেও সাপ কি ভয়ঙ্কর নয়?”
জীবন বদলে দেওয়ার মত চাণক্য নীতি বাণী
“গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না। নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়, তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।”
“একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়, তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়।”
“যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না এবং শুধু অভিযোগ করে যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।”
”দুই ধরনের হিংসুক প্রাণী আছে, যথা সাপ ও সাপের মতোই ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ। এরমধ্যে সাপের মতো ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ অধিক ভয়ানক।“
“সদগুণ সম্পন্ন একজন পুত্র,অযোগ্য শত শত পুত্রের চেয়ে অনেক শ্রেয়। কারণ রাতের আকাশে একটিমাত্র চাঁদই কিন্তু আকাশের সমস্ত অন্ধকারকে দূর করতে পারে।“
“চঞ্চল মন যেকোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার পিছনে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।“
“উৎসবে,বিপদে,দুর্ভিক্ষে,শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে,সে-ই প্রকৃত বন্ধু।“
”দুষ্টা স্ত্রী,প্রবঞ্চক বন্ধু, দুর্মুখ ভৃত্য এবং সর্প-গৃহে বাস মৃত্যুর দ্বার, এ-বিষয়ে সংশয় নেই।“
”শাস্ত্র অনন্ত,বিদ্যাও প্রচুর। সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক। তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত। হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়,তেমনি।“
“দুর্জনের সঙ্গ ত্যাগ করো, সাধু সঙ্গে ভজন করো। দিনরাত সর্বদা পুণ্য কর্মে লিপ্ত থাকো এবং সর্বদা এই জগতের অনিত্যতাকে স্মরণে রেখো।“
”যারা পরিশ্রমী,তাদের জন্যে কোনকিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়।”
”সাপ নিষ্ঠুর খলও নিষ্ঠুর, কিন্তু সাপের চেয়ে খল বেশি নিষ্ঠুর। সাপকে মন্ত্র বা ওষধি দিয়ে বশ করা যায়, কিন্তু খলকে কে বশ করতে পারে?”
“আড়ালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে ভাল কথা বলে, যার উপরে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ করা উচিত।”
১০০ টি মূল্যবান চাণক্য নীতি বাণী | চাণক্যের বাণী | Chanakya Niti Bani
”যার ওপরে বিশ্বাস থাকে না, তাকে কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয়!“
”চঞ্চল চিত্তের ব্যক্তিদের কার্যসিদ্ধি হয় না!“
আমাদের শেষ কথা
চাণক্য নীতি বাণী ও চাণক্যের বাণী সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিন। আপনার কোন মতামত আমাদেরকে জানানোর থাকলে contact-us পেজে গিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এরকম আরও সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ – টি ফলো করুন।
Pabitra
My name is Pabitra Sarkar. I am currently a Content Writer and a Student. I am studying journalism from West Bengal State University. I write articles for many publishers around the world.