করিয়াছি বাণীর সাধনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, Koriyachhi Banir Sadhona, কবিতা, Rabindranath Tagore, Rabindranath Tagore bengali kobita, poem
করিয়াছি বাণীর সাধনা কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Koriyachhi Banir Sadhona

করিয়াছি বাণীর সাধনা কবিতা -টির রচয়িতা হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, সঙ্গীত স্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোট গল্পকার, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি তার জীবনে একাধিক ছোট গল্প ও কবিতা লিখে গিয়েছেন। তার লেখা জনপ্রিয় কবিতা গুলির মধ্যে একটি অন্যতম কবিতা হল করিয়াছি বাণীর সাধনা কবিতা। করিয়াছি বাণীর সাধনা, কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯ জানুয়ারি, ১৯৪১ বঙ্গাব্দে।

করিয়াছি বাণীর সাধনা

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


করিয়াছি বাণীর সাধনা
দীর্ঘকাল ধরি,
আজ তারে ক্ষণে ক্ষণে উপহাস পরিহাস করি।
বহু ব্যবহার আর দীর্ঘ পরিচয়
তেজ তার করিতেছে ক্ষয়।
নিজেরে করিয়া অবহেলা
নিজেরে নিয়ে সে করে খেলা।
তবু জানি, অজানার পরিচয় আছিল নিহিত
বাক্যে তার বাক্যের অতীত।
সেই অজানার দূত আজি মোরে নিয়ে যায় দূরে,
অকূল সিন্ধুরে
নিবেদন করিতে প্রণাম,
মন তাই বলিতেছে, আমি চলিলাম।

সেই সিন্ধু-মাঝে সূর্য দিনযাত্রা করি দেয় সারা,
সেথা হতে সন্ধ্যাতারা
রাত্রিরে দেখায়ে আনে পথ
যেথা তার রথ
চলেছে সন্ধান করিবারে
নূতন প্রভাত-আলো তমিস্রার পারে।
আজ সব কথা,
মনে হয়, শুধু মুখরতা।
তারা এসে থামিয়াছে
পুরাতন সে মন্ত্রের কাছে
ধ্বনিতেছে যাহা সেই নৈঃশব্দ্যচূড়ায়
সকল সংশয় তর্ক যে মৌনের গভীরে ফুরায়।
লোকখ্যাতি যাহার বাতাসে
ক্ষীণ হয়ে তুচ্ছ হয়ে আসে।
দিনশেষে কর্মশালা ভাষা রচনার
নিরুদ্ধ করিয়া দিক দ্বার।
পড়ে থাক্‌ পিছে
বহু আবর্জনা, বহু মিছে।
বারবার মনে মনে বলিতেছি, আমি চলিলাম–
যেথা নাই নাম,
যেখানে পেয়েছে লয়
সকল বিশেষ পরিচয়,
নাই আর আছে
এক হয়ে যেথা মিশিয়াছে,
যেখানে অখন্ড দিন
আলোহীন অন্ধকারহীন,
আমার আমির ধারা মিলে যেথা যাবে ক্রমে ক্রমে
পরিপূর্ণ চৈতন্যের সাগরসংগমে।
এই বাহ্য আবরণ, জানি না তো, শেষে
নানা রূপে রূপান্তরে কালস্রোতে বেড়াবে কি ভেসে।
আপন স্বাতন্ত্র হতে নিঃসক্ত দেখিব তারে আমি
বাহিরে বহুর সাথে জড়িত অজানা তীর্থগামী।

আসন্ন বর্ষের শেষ। পুরাতন আমার আপন
শ্লথবৃন্ত ফলের মতন
ছিন্ন হয়ে আসিতেছে। অনুভব তারি
আপনারে দিতেছে বিস্তারি
আমার সকল-কিছু-মাঝে
প্রচ্ছন্ন বিরাজে
নিগূঢ় অন্তরে যেই একা,
চেয়ে আছি পাই যদি দেখা।
পশ্চাতের কবি
মুছিয়া করিছে ক্ষীণ আপন হাতের আঁকা ছবি।
সুদূর সম্মুখে সিন্ধু, নিঃশব্দ রজনী,
তারি তীর হতে আমি আপনারি শুনি পদধ্বনি।
অসীম পথের পান্থ, এবার এসেছি ধরা-মাঝে
মর্তজীবনের কাজে।
সে পথের ‘পরে
ক্ষণে ক্ষণে অগোচরে
সকল পাওয়ার মধ্যে পেয়েছি অমূল্য উপাদেয়
এমন সম্পদ যাহা হবে মোর অক্ষয় পাথেয়।
মন বলে, আমি চলিলাম,
রেখে যাই আমার প্রণাম
তাঁদের উদ্দেশে যাঁরা জীবনের আলো
ফেলেছেন পথে যাহা বারে বারে সংশয় ঘুচালো।


 আমাদের শেষ কথা 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের করিয়াছি বাণীর সাধনা কবিতা টি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই নিবন্ধটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন এবং এরকম সুন্দর সুন্দর আরও পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ fb.com/banglaprotibedon ফলো করুন।